তিনটি হাংরি উপন্যাস
লেখক : মলয় রায়চৌধুরী
মলয় রায়চৌধুরীকে বাঙালি পাঠক, পড়ে অথবা না পড়েও অনেক ভাবে চেনে। যদিও পাঠকের কাছে তাঁর প্রধান পরিচয় তিনি ষাট দশকের হাংরি আন্দোলনের প্রবর্তক এবং কবিতায় অশ্লীলতার দায়ে হাজতবাস করা একমাত্র বাঙালি লেখক। কবিতা দিয়ে শুরু করলেও মলয় একাধারে ঔপন্যাসিক, গল্পকার, প্রাবন্ধিক, সমালোচক, নাট্যকার, অনুবাদক। মলয় বিশ্বাস করতেন, কল্পনা নয়, নিজেদের যাপনই হবে লেখার বিষয়। জীবনের যা কিছু — বাঁচা, বেঁচে থাকা, প্রেম-যৌনতা, বন্ধুতা-শত্ৰুতা, অহংকার- -ঈর্ষা-লালসা, সততা-শঠতা-ধূর্তামি, প্রজ্ঞা-অজ্ঞতা, ধর্ম-অন্ধবিশ্বাস-কুসংস্কার, রাজনীতি-অর্থনীতি-বিজ্ঞান, ইতিহাস- ভূগোল-সাহিত্য, ভাষা-সংস্কৃতি-শিক্ষা— সমস্ত কিছুই তাঁর ছুঁৎমার্গবিহীন উপন্যাস তথা সামগ্রিক লেখালিখির বিষয় । বাঁধাধরা বঙ্গ-কালচার থেকে, হরির লুঠ থেকে, বাঙালির ভিড় থেকে স্বেচ্ছাবিচ্ছিন্ন মলয় এবং সর্বোপরি বাঙালির সংস্কৃতির পীঠস্থান কলকাতা থেকে মানসিক ও ভৌগোলিক দূরত্বে থাকা মলয় তাঁর অন্যান্য উপন্যাসগুলির মতো ‘জলাঞ্জলি’, ‘নামগন্ধ’, ‘ডুবজলে’ এই তিনটি উপন্যাসে মলয় প্লট থেকে চরিত্রনির্মাণ, ভাষাপ্রযুক্তিতে বাঙালি পাঠককে নতুন ভাবনায় আবারও আক্রান্ত করলেন। একজন লেখক যা করতে পারেন, তা হল, প্রথার বিরুদ্ধে গিয়ে গড়ে-ওঠা এতকালের সেই পাহাড়, বিগ্ৰহ ভাঙ কার কাজ। মলয় আমৃত্যু তাঁর উপন্যাসে, গদ্যে, লেখায় এই ভূমিকাই নিয়েছেন।
অন্তরাল
লেখক : তথাগত মুখোপাধ্যায়
সিঁড়ির দেয়ালে অত্যন্ত অযত্নে ঝোলানো হলদেটে হয়ে যাওয়া ছবিটার কথা পদ্মপুকুরের মিত্র পরিবারের কেউ আর মনে রাখে না। ব্যতিক্রম ওই পরিবারের কনিষ্ঠতম সদস্যা, অষ্টাদশী বিনি। প্রতিবারই সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করার সময় সম্মোহিতর মতো ছবিটায় আটকে যায় বিনির দৃষ্টি। কীরকম যেন আত্মার টান অনুভব করে তার জন্মের আগে নিখোঁজ হয়ে যাওয়া ওই কাকুটির প্রতি। বাবা সুপ্রিয়, মা নীতা, কাকা শুভপ্রিয়, মাম্মা রেণুকা দেবী অথবা তাদের পারিবারিক ডাক্তার লেফটেন্যান্ট মধুসূদন সান্যাল – সবাই যেন এড়িয়ে যায় বিনির জন্মের এক বছর আগে উধাও হয়ে যাওয়া বিবেক মিত্রের প্রসঙ্গ। সবাই যেন ধরেই নিয়েছে বিবেক মিত্র মৃত… আর কোনোদিন ফিরবে না সে… হঠাৎ-আসা একটা টেলিগ্রাম কি বদলে দেবে মিত্রবাড়ির আপাত নিস্তরঙ্গ জীবন? নিজের পারিবারিক অন্ধকারাচ্ছন্ন অতীতকে আলোয় নিয়ে আসার জন্য কেন মরিয়া হয়ে ওঠে বিনি?কী সেই অন্ধ অতীত? ওরা জানে না যে কোনোকিছুর শেষ না দেখে পালিয়ে যাওয়া ওই ফরসা, পেলব, ডেনিম আর ঢোলাশার্ট পরিহিতা, অগোছালো পোনিটেল বাঁধা একগুঁয়ে অষ্টাদশীর চরিত্রেই নেই… অন্তরাল উন্মোচনের জন্যেই যে বিনির আবির্ভাব।