Hungri Sahitye Andolan
সম্পাদনা : প্রণবকুমার চট্টোপাধ্যায়
পৃষ্ঠা : 496
“ঐতিহ্য ! মহেঞ্জোদারো এখন ভিনদেশী বলে বৃন্দাবনে উলঙ্গ বিধবাদের ডাঁই আউশউইৎস ঐতিহ্য ! খানকির বাচ্ছা পুরুত মোল্লার জিভ প্রস্রাবের কল” (একিলিসের গোড়ালিতে নিক্ষিপ্ত তিরের প্রতি, মলয় রায়চৌধুরি’) হাংরি সাহিত্য আন্দোলন ১৯৬১ সালে আত্মপ্রকাশ করে ১৯৬৪ সালে শেষ হয়ে যায়। সাড়া জাগানো এই সাহিত্য আন্দোলন বদলে দিয়েছে আজকের কবিতা লেখার অভিমুখ, বদলে দিয়েছে কবিতা লেখার ভাষা। কাব্য রচনায় এমন শব্দ সম্বন্ধ তৈরি করেছিলেন হাংরি কবিরা যা ওই সময়কালে উচ্চারণ করার স্পর্ধা একমাত্র হাংরি কবিরাই দেখাতে পেরেছিলেন। বাংলার সারস্বত সমাজের এই তোলপাড় তৎকালীন রাজ্য সরকারকে ব্যবস্থা গ্রহণে বাধ্য করেছিল। যার অনিবার্য ফলশ্রুতি কবি মলয় রায়চৌধুরী সহ পাঁচজন কবির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারী পরোয়ানা জারী হয়। ‘তীব্র বৈদ্যুতিক ছুতার’, নামক কবিতাটির বিরুদ্ধে অশ্লীলতার অভিযোগ ওঠে। শৈলেশ্বর ঘোষ এবং সুভাষ ঘোষ দুজন হাংরি কবি মুচলেকা দিয়ে রাজসাক্ষী হয়ে যান এবং নিম্ন আদালতে মলয় রায়চৌধুরীর সাজা হয়ে যায়। ১৯৬৭ সালে উচ্চ আদালতের বিচারে বেকসুর খালাস হয়ে যান কবি মলয় রায়চৌধুরী। হাংরি কবিরাই সেই সময় বলতে পেরেছিলেন, মানুষ, ঈশ্বর, বিজ্ঞান, গণতন্ত্র পরাজিত। কবিতাই এখন একমাত্র আশ্রয়। এখন প্রয়োজন মেরুবিপর্যয়, প্রয়োজন অনর্থ বের করা, চূড়ান্ত বিশৃঙ্খলা থেকে জন্ম নেবে কবিতা। শিল্পের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা কবিতা সৃষ্টির প্রথম শর্ত। ছন্দে গদ্য লেখার খেলাকে কবিতা নাম দিয়ে চালাবার চালাকি এবার শেষ হওয়া প্রয়োজন। টেবিল ল্যাম্প ও সিগারেট জ্বালিয়ে সেরিব্রাল কার্টেকসে কলম ডুবিয়ে কবিতা বানানোর কলে শেষ হয়ে গেছে। এখন কবিতা রচিত হয় অর্গাজমের স্বতঃস্ফুর্তিতে। অন্তর জগতের নিষ্কুণ্ঠ বিদ্রোহ, অন্তরাত্মার নিদারুন বিরক্তি, রক্তের প্রতিটি বিন্দুতে, রচিত হবে কবিতা। অর্থব্যঞ্জনা ঘন হোক অথবা ধ্বনি পারম্পর্যে শ্রুতিমধুর, বিশুদ্ধ, প্রবল চঞ্চল অন্তরাত্মার ও বহিরাত্মার ক্ষুধা নিবৃত্তির শক্তি না-থাকলে কবিতা সতীর মতো চরিত্রহীনা, প্রিয়তমার মতো যোনিহীনা ঈশ্বরীর মতো অনুন্মেষিণী হয়ে যেতে পারে।
আকার (cm) : 16 (l) X 23.5 (b) X 2.5 (h)