AAMI ABISWASYA EKHAN
লেখক : অমৃতা ভট্টাচার্য
পৃষ্ঠা : ৮০
এই সময়ের বাঙালি কবিদের মধ্যে অমৃতা ভট্টাচার্য আকস্মিক আবর্ত! তুমুল তোলপাড়! সেই সচেতনতা আধুনিকার নতুন কাব্যগ্রন্থে, ‘আমি অবিশ্বাস্য এখন’ সত্যি জ্বলে উঠেছে দুর্বার দুঃসাহসে। আবার এই অমৃতাই পারেন কবিতার প্রাণ অর্পণ করতে ‘কত আলতো মুড়ে শালপাতায়।’ এই অনন্যা সরিয়ে রাখতে পারেন ‘পাঁচ ভাগে ভাগ করে বিষণ্ণতা।’ এবং দৃষ্টি এড়ায় না তাঁর পার্থর তীরে রক্তমাংসে সতীচ্ছদ। আমাদের মুগ্ধ করে কত বিচিত্র বর্ণে গন্ধে অমৃতার মন ও মনন। অমৃতা সেই কবি যিনি লিখতে পেরেছেন এই অবিস্মরণীয় চিত্রকল্প : ‘পায়ে তোমার জল লেগে নেই। এমন আত্মজ পা—’। আবার নির্মোহ নিষ্ঠুরতায় এই সুচেতনা বলতে পারেন, হয়তো আমাদের দিকে হাত বাড়িয়ে, ‘তালুর আনন্দ নাও, খিদে দাও, খিদেটুকু খাব।’ ভালোবাসার কবিতায় নিঃসন্দেহে প্রণয়ের নতুন সংজ্ঞা আনলেন অমৃতা। আনলেন উত্তর-আধুনিক প্রেম দর্শন। বাগদত্তার ঠোঁটে চুমু দেওয়া তৃপ্ত পুরুষকে অমৃতা কানে কানে দেন এই মোক্ষম মন্ত্র : চোখ খুলে অবশ্যই জানো, ঠোঁট যার অশ্রু নয় তার।
অমৃতা কি কবিতা লেখেন? নাকি, নিজেই হয়ে ওঠেন কবিতা? পড়তে পড়তে মনে হয়, কিছুই নয় বানানো। প্রতিটি কবিতার ভাষা, বিভঙ্গ, ইশারা, সংবেদ ও সংহিতা, মায়া ও বিদ্বেষ, চলন ও কথন, সব তাঁরই ব্যক্তিত্ব, বিশ্বাস, ব্যাপ্তি ও বলয়ের বিরল প্রকাশ। তিনিই সেই বাঙালি তরুণী যিনি নাগাল পেয়েছেন এই কসমিক উচ্চারণের : ‘উদ্ভিদ এখানে কোনো ত্রাতা নয়। দৈব নয়। দাস।’ অমৃতা অবিরল অনায়াসে লিখেছেন, ‘উঠোনে অরণ্য হেঁটে এল’। অনেকের মুহূর্তে মনে পড়তে পারে, ম্যাকবেথ নাটকে অরণ্যের চলা। এমন ধ্বনি-প্রতিধ্বনি যে কত আছে অমৃতার কাব্যে! বোঝা যায় এই কবির বিদগ্ধ অবচেতনে তাঁর ঘন ও বিস্তৃত লেখাপড়ার বুনন। যেমন, অমৃতার চারটি ভয়ংকর শব্দ, ‘আধা ভ্রূণে ভয় হয়’ ডেকে আনে লেডি ম্যাকবেথের আনসেক্স মি হিয়ার। আবার অমৃতার একটি প্রেমের কবিতার একটি পঙ্্ক্তির লাথি খেয়ে কত যে পুরোনো প্রেমের কবিতা পাপোশে লুটায় : ‘প্রতিটি প্রেমের শেষে মৃত্যু— নিজ পিণ্ডদানে সুখ,— জানো তুমি? বলো অগ্রদানী।’ এমন ছক ভাঙা প্রেমের কবিতা যে অমৃতা লিখতে পারেন, তিনি অবিশ্বাস্য প্রতিভার তাড়নায় লিখেছেন এই কোহিনুর : ‘ডাস্টবিনের বালতি উপচে মেঝেয় ছড়িয়ে আছে জোনাকিরা।’ একটু দূরে এই হঠাৎ ঝলক : ‘বর্ণে বসি, অক্ষরে বসি, বসি অশ্লীল ধ্বনির চূড়ায়’। এরপরেও অসামান্য অমৃতার এই স্বীকারোক্তি : ভাষা ভুলে যাই রোজ। ডায়েরির শেষ পাতা হাঁটু মুড়ে ক্ষমা চায়। কাফকার কোনো ডায়েরিতে এমন ভাবনা পেয়েছি কি?
আকার : 21.5 (h)× 14.5 (w)×1.3 (d)