Amrita Shergil : Shilpa O Jibancharcha
লেখক : শান্তি নাথ
পৃষ্ঠা : 208
শ্রী অবন প্রবর্তিত যে শিল্পধারা তা ক্রমশ ভারত শিল্পকলারূপে চিহ্নিত হয়ে উঠেছিল এবং কালক্রমে নবজাগরণের শিল্পরীতি হিসেবেই দেখা হত। ভারতীয় আধুনিক শিল্প বলতে বোঝাত শ্ৰী অবনের রোমান্টিক শিল্পধারা, যে-ধারার মধ্যে প্রাণের বড়ো অভাব ছিল, কিন্তু তৎকালীন শিল্প-ইতিহাসবিদ্রা এ ধারায় মুগ্ধ ছিলেন কারণ ভারতের বাইরে যে শিল্পধারা সে সম্পর্কে সচেতন হওয়া তাদের পক্ষে সম্ভব ছিল না। অমৃতা শেরগিলের বিশ্ব শিল্প-ইতিহাসের সঙ্গে সম্যক পরিচয় ঘটেছিল কিন্তু তাঁর মনে হত তিনি ভারতীয়, সুতরাং তাঁর শিল্প কখনো পিকাসো, ব্রাক, মাতিন, ভানগঘ, সেজান বা পল গগাঁর মতো হবে না। ইউরোপের জীবনশৈলী আর ভারতীয় জীবনশৈলী সম্পূর্ণ আলাদা। অমৃতা শেরগিল (১৯১৩-১৯৪১) অনুভব করেছিলেন, ভারতীয় সত্তায় বিষন্নতাবোধ ঈশ্বরবোধের মতো বসে আছে। অস্তিত্ব এবং অধিকারবোধ সম্পর্কে স্পষ্ট কোনো ধারণা নেই। প্রেতকায় এক জীবনকে সঙ্গে নিয়ে সকলের মাঝে বসেই এমনকি বিছিন্ন-মানসিক ঐক্যের অভাব। কিন্তু শিল্পধারায় সে ধারা ছিল অনুপস্থিত। ভারতমাতা কোনো রোমান্টিক বা আধ্যাত্মিক ধারণায় গড়ে ওঠে না। তাকে গড়ে তোলা হয় ভিক্ষুক পরিবার রূপে। অমৃতা বুঝেছিলেন এটাই তাঁর স্বদেশভূমি। ভারতকে তিনি সঠিক অস্তিত্বে চিনতে পেরেছিলেন। এ জানার জন্যে তাঁর জীবনকে পোড়াতে হয়েছিল। বিপদকে সাথে নিয়ে হিংস্র সাপের সঙ্গে খেলা করাই ছিল তার শিল্পবোধ, ফলে, পল গগার পোস্টইমপ্রেশনিস্টিক ধারাই তাঁর কাছে উপযুক্ত বলে মনে হয়েছিল। কেবলমাত্র আয়তন বা তল সৃষ্টিতেই কিউবিক সৃষ্টি হত না, তাঁর নির্মাণের পিছনে কাজ করত স্থায়িত্ববোধ। জীবনকে প্রশ্নহীন করে তোলায় যেন ভারতীয় জীবন। এই রূপ ও ধারার জন্যে ভাস্কর্যরূপে কিউবিক বোধ স্থাপন করেছিলেন। উদ্দেশ্যের সপক্ষে তিনি রঙের যে প্রক্রিয়া ব্যবহার করতেন তখন ভারতীয় শিল্পীদের তা জানা ছিল না, ফলে শিল্প-ইতিহাসবিদ্দের কাছে তিনি হয়ে পড়েছিলেন ব্রাত্য। প্রকৃত প্রস্তাবে অমৃতা শেরগিল প্রথম ভারতীয় আধুনিক চিত্রশিল্পী, যার ধারা ছয়ের দশকে সব ভারতীয় শিল্পীদের চলার পথ হয়ে উঠেছিল। জন্মশতবর্ষে তার প্রতি বিনম্র এই শ্রদ্ধাজ্ঞাপন।
আকার (cm) : 22 (l) X 28 (b) X 2 (h)